পূর্ব বাংলার ইতিহাস
পূর্ব বাংলা বা পূর্ববঙ্গ নামটি ব্যবহার করা হত বিংশ শতক পর্যন্ত। এই পূর্ব বাংলা বলতে সেই সময় যে এলাকাকে বুঝানো হত তার একটি অংশ বর্তমানে বাংলাদেশ নামে পরিচিত। তবে পূর্ব বাংলার সীমানা বর্তমান বাংলাদেশের থেকে বড় ছিল। মূলত অবিভক্ত বাংলার একটি নির্দিষ্ট অংশ এই নামে পরিচিত ছিল এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান শাসন আমলে এই সীমানা আরও পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
প্রথম বিভক্তিকরণ ১৯০৫-১৯১২ (ব্রিটিশ ভারত)
মূল নিবন্ধ: বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)
ব্রিটিশ ভারতে সর্বপ্রথম বাংলাকে ভাগ করা হয়। পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের পর ব্রিটিশরা বাংলার উপর আধিপত্য লাভ করে এবং বাংলা ভারতে ব্রিটিশ কর্মকাণ্ডের সদর দপ্তর হয়ে উঠে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষমতা ব্রিটিশ সরকারের কাছে চলে যায়। ১৯০০ সাল নাগাদ বাংলা প্রদেশ ব্যাপক আয়তনের হয়ে উঠে।
লর্ড কার্জন ভাইসরয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বিশাল প্রদেশের শাসনকাজকে দুরূহ হিসেবে বিবেচনা করে প্রদেশ বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসাম নতুন প্রদেশ হিসেবে গঠনের কথা বলা হয়। এর ফলে মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলার অনগ্রসর মুসলিমদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়।
কার্জন এই পদক্ষেপকে শাসনতান্ত্রিক কারণে বলে দাবি করলেও কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলার হিন্দু বুদ্ধিজীবী ও নেতারা এর বিরোধিতা করেন। ১৯০৫ সালের জুন মাসে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়। এর ফলে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ১৯১২ সালে ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ রদ করে। তবে বাংলা থেকে আসাম , বিহার ও উড়িষ্যা পৃথক করা হয়। পাশাপাশি ভারতের রাজধানী
কলকাতা থেকে দিল্লি স্থানান্তর করা হয়।
দ্বিতীয় বিভক্তিকরণ ১৯৪৭ (পাকিস্তান)
মূল নিবন্ধগুলি: বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭) , পূর্ব পাকিস্তান এবং দ্বিজাতি তত্ত্ব
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় বাংলা পুনরায় বিভক্ত হয়। এর ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলা এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম বাংলা প্রদেশ গঠিত হয়। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের এবং পশ্চিম বাংলা ভারতের প্রদেশ হয়। ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর পূর্ব বাংলার নাম পাল্টে পূর্ব পাকিস্তান রাখা হয়। [১] ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা বজায় ছিল। এরপর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীন হয়।
প্রাদেশিক সরকার
পাকিস্তান ক্ষমতা গ্রহনের পর পূর্ব পাকিস্তান (পূর্বের পূর্ব বাংলা) পরিচালনার ক্ষমতা ছিল আনুষ্ঠানিক
গভর্নর এবং পরোক্ষভাবে-নির্বাচিত
প্রধান মন্ত্রীর কাছে। মে, ১৯৫৪ থেকে আগস্ট ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত নির্বাহী ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী ছিলেন গভর্ণর এবং সেই সময় কোনো প্রধান মন্ত্রী ছিল না।
সময়কাল পূর্ব বাংলার গভর্ণর[২]
১৫ই আগস্ট, ১৯৪৭ - ৩১শে মার্চ, ১৯৫০ স্যার ফ্র্যাডেরিক চালমার্স বোর্ন
৩১শে মার্চ, ১৯৫০ - ৩১শে মার্চ ১৯৫৩ স্যার ফিরোজ খান নুন
৩১শে মার্চ, ১৯৫৩ - ২৯শে মে, ১৯৫৪ চৌধুরী খালিকুজ্জামান
২৯শে মে, ১৯৫৪ - মে, ১৯৫৫ ইস্কান্দার মির্জা
মে, ১৯৫৫ - জুন, ১৯৫৫ মুহাম্মদ শাহাবউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত)
জুন, ১৯৫৫ - ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৫ আমিরউদ্দিন আহমেদ
১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৫ পূর্ব বাংলা প্রদেশ বিলুপ্ত
সময়কাল পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী[২] রাজনৈতিক দল
১৫ই আগস্ট, ১৯৪৭ - ১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ খাজা নাজিমুদ্দিন মুসলিম লীগ
১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ - ৩রা এপ্রিল, ১৯৫৪ নুরুল আমিন মুসলিম লীগ
৩রা এপ্রিল, ১৯৫৪ - ২৯শে মে, ১৯৫৪ এ কে ফজলুল হক যুক্তফ্রন্ট
২৯শে মে, ১৯৫৪ - আগস্ট, ১৯৫৫ গভর্নরের শাসন
আগস্ট, ১৯৫৫ - ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৫ আবু হোসেন সরকার কৃষক শ্রমিক পার্টি
১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৫ পূর্ব বাংলা প্রদেশ বিলুপ্ত
প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক চিহ্ন
পূর্বের পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান চারটি প্রাদেশিক চিহ্নগুলো হল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দোয়েল পাখি, বট গাছ এবং সাদা শাপলা ফুল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এগুলোকে জাতীয় চিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করে আসছে।
Leave a Message